মতিয়ার চৌধুরী,লন্ডনঃ ব্রেক্সিট পরবর্তী ব্রিটেনের নতুন ইমিগ্রেশন নীতির ঘোষণা দিয়েছেন ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারী প্রীতি প্যাটেল। পয়েন্ট ভিত্তিক নতুন এই ইমিগ্রেশন নীতিতে ব্রিটেনে প্রবেশের ক্ষেত্রে একজন মাইগ্রেন্টকে কম পক্ষে ৭০ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।
এবছরের ৩১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে ব্রিটেনের আনুষ্ঠানিক বিচ্ছেদ ঘটে। আগামী বছরের জানুয়ারী থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত দেশগুলোর নাগরিকদেরও ভিসা নিয়ে ব্রিটেনে ঢুকতে হবে।
ব্রেক্সিট-পরবর্তী পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় রেখে নতুন এই অভিবাসন আইন করতে যাচ্ছে ব্রিটিশ সরকার।২০২১ সাল থেকে চালু হতে যাওয়া নতুন এই নিয়ম ইরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইউনিয়নের বাইরের সকল দেশের নাগরিকদের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। তবে নতুন নিয়ম ইইউ বহির্ভূত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য কিছুটা শিথিল হবে।
হোম অফিসের এই ঘোষণায় নেই দীর্ঘদিন যাবত ব্রিটেনে বসবাসরত লাখ লাখ আনডকুমেন্ট মাইগ্রেন্টদের বৈধতার বিষয়টি।এতে হতাশ অনেকেই। সেই সাথে স্যোশাল কেয়ারার ওয়ার্কাদেরও দেয়া হয়নি ফাস্ট ট্র্যাক ভিসা সুবিধা।স্যোশাল কেয়ারারদের ফাস্ট ট্র্যাক সুবিধা না দেয়ায় সমালোচনা করেছে এনএইচএসসহ একাদিক ট্রেডইউনিয়ন ।
২০২১ সালের জানুয়ারী মাস থেকে নতুন ইমিগ্রেশন নীতি বাস্তবায়িত হবে।এতে ব্রিটেনের ভেতর থেকে কর্মী সংখ্যা বাড়ানোর উপর উৎসাহ দেয়া হয়েছে এবং বিশ্বের যেকোন দেশ থেকে ভালো কর্মী আনার সুযোগ সৃস্টি করা হয়েছে বলে দাবী করেছেন হোম সেক্রেটারী প্রীতি প্রাটেল।এদিকে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, যোগ্যতা থাকলে বাঁধাহীন ভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করতে পারবে।
পয়েন্ট ভিত্তিক নতুন এই নিয়মের কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য দিক হলো:বিদেশী অপরাধীদের যারা ১২ মাস কারাগারে ছিলো এবং যাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা রয়েছে তাদেরকে ব্রিটেনে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হবে।
একই সাথে ব্রিটেনে যদি কোন অভিবাসী এক বছরের বেশি দন্ডিত হন, তাকেও নতুন অভিবাসন বিধি মোতাবেক নিজ দেশে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে নতুন এই বিধিতে।
ব্রিটেনে কাজের জন্য প্রবেশ করতে হলে কমপক্ষে ৭০ পয়েন্ট অর্জন করতে হবে।যারা ব্রিটেনে প্রবেশ করতে চান তাদের নূন্যতম বেতনের থ্রেশহোল্ড থাকতে হবে।ফাস্ট ট্র্যাক হেলথ এন্ড কেয়ার ভিসার সুযোগ থাকবে এনএইচএস এর নিয়ম মেনে। তবে স্যোশাল কেয়ার স্টাফ এই সুযোগ পাবে না।দক্ষ কর্মীরা তাদের পরিবার নিয়ে আসার সুযোগ পাবে।
নতুন নিয়মে বেশির ভাগ কর্মীকেই সর্বনিম্ন বছরে ২৩,০৪০ পাউন্ড বেতন হতে হবে।তবে কিছু ক্ষেত্রে দক্ষতা সম্পন্ন ল্যাব টেকনিশিয়ানদের বছরে ২০,৪৮০ পাউন্ড বেতন হলেও চলবে।অনুমোদিত চাকুরী দাতা স্পন্সর কাজের অফার দিলে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করা যাবে।
বাকী ২০ পয়েন্ট অর্জন করা যাবে যদি চাকুরী প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার বা তথ্য প্রযুক্তি মতো কাজের অভিজ্ঞতা থাকে।একই সাথে বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষক,প্রযুক্তি,প্রকৌশলী, গনিতবিদদের ক্ষেত্রেও নিজেদের অভিজ্ঞতার আলোকে ২০ পয়েন্ট অর্জনের পাশাপাশি বার্ষিক বেতন ২৫৬০০ পাউন্ড হতে হবে।ইংরেজী জানা না জানা কর্মীদের ক্ষেত্রে বার্ষিক বেতন কম বা বেশি হওয়ার পাশাপাশি পয়েন্ট ও কম বেশি নির্ধারন করা হয়েছে।
হোম সেক্রেটারী প্রীতি প্যাটেল বলেছেন,ব্রিটেনের মধ্যে থেকে কর্মীদের বিনিয়োগে নিয়োগকারীদের উৎসাহ দেওয়া হবে।তিনি আরো বলেন, নতুন অভিবাসন ব্যবস্থা “বিশ্বের সেরা এবং প্রতিভাবানদের কাছে আকর্ষনীয় হবে।
তবে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছে,কেয়ার ওয়ারকারদের এই ব্যবস্থায় অর্ন্তভূক্ত করা হয়নি।এদিকে শেডো হোম সেক্রেটারী নিক থমাস-সাইমন্ডস বলেছেন, “স্বাস্থ্য ভিসা থেকে কেয়ারওয়াকারদেকে বাদ দেওয়া, এটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে , যারা দক্ষতার এবং আন্তরিকতার সাথে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে তাদের টরি সরকার মূল্যায়ন করছে না ।এটি তাদের জন্য অপমানজনক ।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর এক মুখপাত্র বলেছেন,সরকার চাইছে যারা এ দেশে বসবাস করছেন ,নিয়োগকর্তারা যেন তাদেরকে প্রশিক্ষন এবং দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগ করে । এছাড়া যুক্তরাজ্যে পড়াশুনা করতে আসা শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশুনা শেষে দুই বছর অতিরিক্ত যুক্তরাজ্যে অবস্থান এবং কাজের সুযোগ পাবেন।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply