বাঙালির বাতিঘর খ্যাত কিংবদন্তি সাংবাদিক, অমর একুশে গান ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো‘র রচয়িতা প্রখ্যাত সাংবাদিক কলামিষ্ট আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী আর নেই (ইন্না লিল্লাহ ই ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ১৯ মে বৃহস্পতিবার লন্ডন সময় সকাল ৬.৪৮ মিনিটে গ্রেটার লন্ডনের বার্নেট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন ।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৮৮ বছর। জনাব আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেন তাঁর মেয়ে তানিমা চৌধুরী। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিল রুগে দীর্ঘদিন যাবত বার্নেট হাসপাতালেই শয্যাশায়ী ছিলেন। গত ১৩ই এপ্রিল ক্যানসার আক্রান্ত তাঁর তৃতীয়া কন্যা বিনীতা চৌধুরীর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে শয্যাশায়ী গাফ্ফার চৌধুরী হাউমাউ করে কেঁদে বলেছিলেন, ‘যাবার সময় আমার, অথচ চলে গেলো আমার মেয়ে’। তাঁর এই কান্নার একমাস যেতে নাযেতেই তিনিও চলে গেলেন।
কয়েক বছর আগে তিনি হারিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীকেও।ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বাঙালির স্বাধীকার আন্দোলনের ইতিহাসের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে চার মেয়ে ও এক ছেলের জনক কিংবদন্তী পুরুষ গাফ্ফার চৌধুরীর নাম।১৯৩৪ সালের ১২ ডিসেম্বর বরিশাল জেলার উলানিয়া গ্রামের চৌধুরী বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন গাফ্ফার চৌধুরী।
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন কিংবদন্তি সাংবাদিক আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী
তার বাবা হাজি ওয়াহিদ রেজা চৌধুরী ও মা মোসাম্মৎ জহুরা খাতুন চৌধুরী। তিন ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে বড় ভাই হোসেন রেজা চৌধুরী ও ছোট ভাই আলী রেজা চৌধুরী। বোনেরা হলেন- মানিক বিবি চৌধুরী, লাইলী খাতুন চৌধুরী, সালেহা খাতুন চৌধুরী, ফজিলা বেগম চৌধুরী ও মাসুমা বেগম চৌধুরী।
১৯৩৪ সালে বরিশালে জন্ম নেওয়া গাফ্ফার চৌধুরী ১৯৫৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স পাস করে ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার রাজনৈতিক পত্রিকা ‘চাবুক’ এর দায়িত্ব নেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকারের মুখপাত্র ‘জয়বাংলা’য় কাজ করেন গাফ্ফার চৌধুরী। ১৯৭৪ সালে অসুস্থ স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে আসেন এরপর লন্ডনেই স্থায়ী হন।
১৯৭৩ সালে তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলজিয়ার্সে ৭২ জাতি জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে অংশ নেন । লন্ডন থেকে দেশের সংবাদপত্রে নিয়মিত কলাম লেখেন তিনি।১৯৪৬ সালে স্কুলের ছাত্র অবস্থায় কলাম লেখা শুরু করেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। বরিশাল হিতৈষী পত্রিকায় তার প্রথম লেখার শিরোনাম ছিল ‘সমাচার সন্দেশ’। ৬০ বছর ধরে মিঠাকড়া, ভীমরুল, তৃতীয় মত, কাছে দূরে, একুশ শতকের বটতলায়, কালের আয়নায়, দৃষ্টিকোণ ইত্যাদি শিরোনামে কলাম লিখেছেন তিনি।
কলাম ছাড়াও কবি, নাট্যকার ও ঔপন্যাসিক হিসেবে পরিচিত তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যার ওপর লেখা ‘পলাশী থেকে ধানমণ্ডি’ তার বিখ্যাত নাটক।১৯৫০-এর দশকে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কর্মজীবন শুরু করেন তিনি। পেশাগত কাজে সফলতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক, ইউনেস্কো পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু পুরস্কার, মানিক মিয়া পদকসহ দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক একাধিক পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে রিলিজ করার পর ইষ্ট লন্ডনের ব্রিকলেন জামে মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে জনাব চৌধুরীর মরদেহ বাংলাদেশে নেয়া হবে সেখানে তাঁকে তার অসিহত অনুসারে স্ত্রীর কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply