অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে বরগুনার নিম্নাঞ্চলসহ মাঠঘাট একাকার হয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে আউসের ক্ষেত, আমনের বীজতলা, ঝিঙ্গে লাউ-কুমড়া, শশা পুঁইশাকসহ সব ধরনের রবি ফসল, পানের বরজ। ভেসে গেছে গৃহস্থের পুকুর আর চাষীদের ঘেরের মাছ।
ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়ে যানবাহন চলাচলে। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় সকল মানুষ।
গত বুধবার থেকে শনিবার (৩১ জুলাই) সকাল পর্যন্ত অতিবর্ষণ ও পূর্ণিমার জোঁর প্রভাবে জেলার পায়রা ও বিশখালী নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপকুলীয় বরগুনা সদর, আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বামনা, বেতাগীর চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাইরে বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। পানিবন্ধী হয়ে পড়েছে জেলার প্রতিটি গ্রামের মানুষ।
জনজীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। পানিতে মাঠ-ঘাট থই থই করছে। তলিয়ে গেছে আউশের ক্ষেত ও আমনের বীজতলা। কৃষকের কপালে পড়েছে হতাশার ভাঁজ। হা পিত্তেশ করছে রবি ফসল ও মাছ চাষীরা।
এদিকে স্লুইজগেটগুলোর জলকপাট দিয়ে তেমন পানি নিস্কাশন না হওয়ায় প্রতিটি এলাকায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা। দ্রুত পানি নিস্কাশন না হলে আউশের ক্ষেত, আমনের বীজতলা, পানের বরজ, রবি ফসল পঁচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসন করে দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবী জানিয়েছেন তারা।
বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না ইউনিয়নের ছোটবদরখালী গ্রামের ইউপি সদস্য মানিক চন্দ্র রায় জানান, তাঁর ৪৫ শতাংশ জমির পানের বরজ ও ৪০ শতাংশ জমির আমনের বীজতলা পানির নীচে তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে ৪০ শতাংশ ঘেরের মাছ এবং তার পাড়ের সবজি ক্ষেত। , একই গ্রামের কৃষক পরিমল চন্দ্র রায়, মোতালেব মিয়া, সুবাস রায়, নারায়ন গোমস্তা, লিটন চন্দ্র মিত্রসহ সকল কৃষকেরই রবি ফসল, আউশ ক্ষেত, বীজতলা, পানের বরজ, মাছের ঘের ও পুকুর বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
একই কথা জানালেন, খাজুরতলা, কুমড়াখালী, নলটোনা, গৌরীচন্না, ভোড়া, বেতমোরসহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা।
অপরদিকে প্রবলবৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে বরগুনা সদরের বাওয়ালকর, ফুলঝুড়ি বাজার, কালিকাবাড়ি, এম. বালিয়াতলী, নলটোনা, পদ্মা, নিশানবাড়িয়া, কালিকাবাড়ি, আমতলীর পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম ঘটখালী, গুলিশাখালী ও হরিদ্রবাড়িয়া, বামনার রামনা, সফিপুর, কাটাখালী, পাথরঘাটার জিনতলা, কালমেঘা, ছোনবুনিয়া, গোরাপদ্মা, রুহিতা প্রভৃতি পায়রা ও বিশখালী পাড়ের বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।
আবার বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ না থাকায় আমতলীর গাজীপুর বন্দর জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ী কালাম হাওলাদার।
আমতলী পৌর শহরের আমতলী সরকারী কলেজ, এমইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠ পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে বরগুনার পুরাকাটা-আমতলীর পায়রা নদীর ফেরি এবং বরগুনার বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে গেছে। এতে যানবাহন ও মানুষের চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। মানুষ হাঁটু পরিমাণ পানি ডিঙ্গিয়ে সড়কে উঠছে। দ্রুত এ ফেরি দুটির গ্যাংওয়ে সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কায়সার আলম বলেন, পায়রা নদীতে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৭৫ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে চর ও নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে কিন্তু বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে পানি ভিতরে পানি প্রবেশ করেনি। তিনি আরো বলেন, ঝুকিপূর্ণ বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ আগেই সংস্কার করা হয়েছে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply