করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের মেয়াদ একই শর্তে আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ল। বৃহস্পতিবার থেকে আরো এক সপ্তাহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়িয়ে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
এতে বলা হয়, আন্তজাতিক বিশেষ ফ্লাইট চলাচল, ব্যাংকিং কার্যক্রম অব্যাহত রাখাসহ আগের সব বিধিনিষেধ আরোপের সময়সীমা ২১ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হলো।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। ২১ এপ্রিল তা শেষ হওয়ার কথা।
এরই মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চলমান লকডাউনের (বিধিনিষেধ) মেয়াদ আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বিধিনিষিধ একই থাকছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে গত রোববার রাতে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৩১তম সভায় ‘কঠোর লকডাউন’ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন গতকাল জানান, প্রধানমন্ত্রীর কাছে (লকডাউনের বিষয়ে) সামারি পাঠানো হয়েছে। তিনি অনুমোদন দিলে প্রজ্ঞাপন জারি হবে। আজ জারি হলো।
করোনা সংক্রমণ রোধে গত ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে আটদিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। আগামীকাল বুধবার (২১ এপ্রিল) মধ্যরাত পর্যন্ত এই লকডাউন বহাল থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে চলমান লকডাউন আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
গতকাল সকালে এই বিষয়টি প্রথমে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, চলমান লকডাউনের মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাড়ানোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সরকার সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তবে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের ভাবনাও সরকারের রয়েছে। নিজের সরকারি বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে সরকার ঈদের আগে লকডাউন শিথিলের চিন্তাভাবনা করছে।
ঈদের সময় ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতের জন্য লকডাউন শিথিল হতে পারে। মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন ও ধৈর্য ধরুন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সরকার সারা দেশে আরো এক সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর সক্রিয় চিন্তাও করছে।
লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে আন্তঃমন্ত্রণালয় ভার্চুয়াল সভা বসে। সভায় করোনা সংক্রমণ রোধে আরো এক সপ্তাহের জন্য ‘কঠোর লকডাউন’ আরোপে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
এ বিষয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি লকডাউনের মেয়াদ আরো সাত দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। সাইন্টিফিক্যালি তো ১৪ বা ১৫ দিন লকডাউন না হলে সংক্রমণের চেইনটা পুরোপুরি ভাঙা সম্ভব হয় না। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে আগামী ২২ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আগের শর্ত মেনে লকডাউন কন্টিনিউ করবে। বিধিনিষেধ আরো সাত দিন বাড়ল।’
ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘সংক্রমণ ম্যানেজ করাটা আমাদের উদ্দেশ্য, ব্যবসায়ীরা যাতে ঈদের ব্যবসাটা করতে পারে সেটা মাথায় রেখেই এখন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পরিস্থিতি কী হয় সেটা বিবেচনা করেই পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা মনে করছি (লকডাউন) আরো সাত দিন দিলে সংক্রমণ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘তবে এর মধ্যে কঠোর স্বাস্থ্যবিধিটা মানার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মাস্ক পরার অভ্যাসটা সবাইকে গড়ে তুলতে হবে। যতদিন না স্থায়ী সমাধান হচ্ছে ততদিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে বাইরে এলে মাস্ক পরতে হবে। আমরা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের অবস্থা দেখছি। স্বাস্থ্যবিধি মানলেই আমরা এটা ম্যানেজ করতে পারব।’
এর আগে লকডাউন ঘোষণা করে গত ১২ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। লকডাউনের মধ্যে ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। নির্দেশনা অনুযায়ী লকডাউনের আটদিন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে গণপরিবহন। তবে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান-সংস্থা খোলা। খোলা রয়েছে শিল্পকারখানা। সীমিত পরিসরে দেয়া হচ্ছে ব্যাংকিং সেবা। এই সময়ে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবে না। খোলা স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাবেচা করা যাবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত।
করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বাড়তে থাকায় এর আগে গত ৫ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত লকডাউন বা বিধিনিষেধ ছিল। তবে গণপরিবহন, মার্কেট খোলা রেখে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। একই সাথে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এলাকায় দুই সপ্তাহ পূর্ণ লকডাউনের সুপারিশ করে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার।
চট্টগ্রামে আবারো জোনভিত্তিক লকডাউন
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে আবারো করোনা সংক্রমণের হার বিবেচনায় নিয়ে জোনভিত্তিক লকডাউন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে নগরীর চকবাজার থানার জয়নগর আবাসিক এলাকা এবং চমেক হাসপাতাল স্টাফ কোয়ার্টারকে রেড জোন ঘোষণা করেছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। গতকাল সকালেএই দুই এলাকাকে রেড জোনের আওতায় এনে ব্যানার ঝুলিয়ে দেয় পুলিশ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আইইডিসিআর এর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে ৬০ জনের বেশি মানুষের মধ্যে করোনার সংক্রমণ থাকলে ওই এলাকাকে রেড জোন হিসেবে গণ্য করা যাবে। সেই হিসেবে চকবাজার এলাকার এই অংশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চার শতাধিক ছাড়িয়েছে। তাই এই এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে।
গত বছরও করোনার সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে থাকলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১০টি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে উত্তর কাট্টলী এলাকা লকডাউন করা হয়েছিল।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply