হবিগঞ্জের বেশ কয়েকটি স্থানীয় পত্রিকা, অনলাইন পোর্টাল ও ফেইসবুকে জন্মান্ধ শাহেনা ও শাবানার জীবন সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরার পর তাদের পাশে দাড়িয়েছেন অনেকেই। তারা দুইবোন পুরোপুরি অন্ধ।
বাবা নেই, বৃদ্ধা ও অসুস্থ মাকে নিয়ে তাদের কষ্টের জীবন। আর্থিক সম্বল বলতেও কিছু নেই। একাত্তর টিভির শাকিল চৌধুরী শাহেনা ও শাবানার ছোট বহুলার গ্রামের বাড়িতে গিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরী করে এনেছেন। দেশের এবং বিদেশের বেশ কিছু হৃদয়বান মানুষ শাহেনা ও শাবানার জন্য স্থায়ী কী ব্যবস্থা করা যায় সে ব্যাপারে আলোচনা করেছেন।
এরই মধ্যে তাদের আত্বীয় স্বজনের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়। গরু ছাগল হাস মুরগী পালনসহ কোনো কিছু করে খাওয়ার মতো যেহেতু তাদের সুযোগ নাই সেহেতু আমরা একটি ফান্ড গঠন করে তাদেরকে জমি বন্ধক রেখে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেই। শাহেনা ও শাবানার গ্রামের বাড়িতে প্রতি ক্ষের কৃষি জমি নূন্যতম ৫০ হাজার টাকায় বন্ধক পাওয়া যায়। ২ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সর্বোচ্চ ৪ ক্ষের কৃষি জমি তাদেরকে বন্ধক রেখে দেয়ার লক্ষ্যে একটি ফান্ড গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
শাহেনাদের গ্রাম এলাকায় প্রতি ক্ষের জমিতে বোরো আবাদ হয় গড়ে ১৪/১৫ মন হারে । যদি জমিটি দুফসলা অর্থাৎ অগ্রহায়ন মাসের ধান উৎপাদন করা যায় তাহলে গড়ে প্রতি ক্ষের জমিতে আমন ধান আবাদ হবে আরও ৬/৭ মন হারে। অর্থাৎ প্রতি ক্ষের জমিতে গড়ে এক বছরে ধান উৎপাদন করা যায় প্রায় ২০ মন দরে। যেহেতু তারা নিজেরা কৃষি জমি আবাদ করতে পারবে না, সেগুলো বর্গাচাষ দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে শাহেনা ও শাবানারা উৎপাদিত ধানের অর্ধেক ধান পাবে।
৪ ক্ষের জমি বর্গাচাষাবাদের জন্য দিলেও প্রতি বছর তারা ৪০/৫০ মন ধান পেতে পারে। এক বছরে তাদের খাবার বাবদ ধান প্রয়োজন হবে ১৫/২০ মন। বাকী ধান বিক্রি করে তারা নিত্য প্রয়োজনীয় খরচ যোগাতে পারবে। বন্ধক রাখা জমিগুলোর প্রয়োজনীয় কাগজ শাহেনা ও শাবানার হাতে পৌছে দেয়া হবে। শাহেনা ও শাবানার সাময়িক খরচ মেটানোর জন্য ইতিমধ্যে ১৫ হাজার টাকা নগদ প্রদান করা হয়েছে। তাদেরকে আর নগদ অর্থ প্রদান না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে স্থায়ী আর্থিক সংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এ লক্ষ্যে নগদ ২৬ হাজার ৭৫ টাকা হাজার টাকা জমা আছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও ১৫ হাজার টাকা সহযোগিতা করবেন বলে ২জন জানিয়েছেন। উদ্যোগ বাস্তবায়নে আর প্রয়োজন ১ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। ঠিক দুই লাখ টাকা হলেই অন্ধ শাহেনা ও শাবানার জন্য আমাদের মাধ্যমে আর কোনো টাকা গ্রহণ করা হবে না। যারা অন্ধ শাহেনা ও শাবানার জন্য আর্থিক সহযোগিতা করছেন তাদের নাম ও টাকার পরিমান প্রকাশ করা হবে (যদি আপত্তি না থাকে)। আসুন আমরা মানবিক হই। অল্প অল্প দান করার পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে একেক সময় একেকটি পরিবারকে স্বাবলম্বি করার চেষ্টা করি।
আবারও সূরা আন আমের ৫০নং আয়াতের কথা স্বরণ করি-“তারপর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো- চোখ ওয়ালা (দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষ) ও চোখ ছাড়া (অন্ধ) মানুষগুলো কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা ভাবনা কর না?”
টিকাঃ অন্ধ শাহেনা ও শাবানাকে যারা আর্থিক সহযোগিতা করেছেন তারা হলেন ১। শফিকুল ইসলাম কামাল ৫হাজার টাকা, মঈনুদ্দিন আহমেদ কাউছার ১০ হাজার টাকা, আব্দুল মোতালিব ৬ হাজার টাকা, ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী নয়ন দুই বারে ১৪ হাজার ২৫৯ টাকা, ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী নয়নের এক বন্ধু ৫ হাজার টাকা। সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরীর পরিবার থেকে তাদেরকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হয়েছে। সপ্তাহে একদিন আপডেট প্রদান করা হবে।
লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ২০ এপ্রিল ২০২১
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply