স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বায়তুল মোকাররমে সহিংসতার ঘটনায় বাংলাদেশ হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকসহ ১৭ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
সোমবার পল্টন থানায় মামলাটি দায়ের করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উপ-দফতর সম্পাদক খন্দকার আরিফ-উজ-জামান।
পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বক্কর সিদ্দিক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলায় মামুনুল হককে হুকুমের আসামি করা হয়েছে।
অন্য আসামিরা হলেন- ২. মাওলানা ফলায়েদ আল হাবিব (যুগ্ম-মহাসচিব), ৩. মাওলানা লোকমান হাকিম (যুগ্ম-মহাসচিব), ৪. নাসির উদ্দিন মনির (যুগ্ম-মহাসচিব), ৫. মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া (নায়েবে আমির), ৬. মাওলানা নুরুল ইসলাম জেহাদী (মাথজান, ঢাকা), ৭. মাজেদুর রহমান (নায়েবে আমির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ৮. মাওলানা হাবিবুর রহমান (লালবাগ, ঢাকা), ৯. মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ আইয়ুবী, ১০. মাওলানা জসিম উদ্দিন (সহকারী মহাসচিব, লালবাগ), ১১. মাওলানা মাসুদুল করিম (টঙ্গী, সহ-সাংগঠনিক), ১২. মুফতি মনির হোসাইন কাশেমী (অর্থ সম্পাদক), ১৩. মাওলানা যাকারিয়া নোমান ফয়েজী (প্রচার সম্পাদক) ১৪. মাওলানা ফয়সাল আহমেদ (মোহাম্মদপুর, ঢাকা), ১৫. মাওলানা মুশতাকুন্নবী (সহকারী দাওয়াহ সম্পাদক), ১৬. মাওলানা হাফেজ মো: জোবারের (ছাত্র ও যুব সম্পাদক) এবং ১৭. মাওলানা হাফেজ মো. তৈয়ব (দফতর সম্পাদক)।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে মামুনুল হকের নির্দেশে ১৭ হেফাজত নেতার নেতৃত্বে দেশী-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্রসহ দা, ছোরা, কুড়াল, কিরিচ, হাতুড়ি, তলোয়ার, লাঠিসোটাসহ অতর্কিত হামলা চালানো হয়। এ হামলায় আরিফ-উজ-জামান গুরুতর আহত হন।
মামলার এজাহারে আরিফ-উজ-জামান লিখেছেন, ২৬ মার্চ দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হয়ে মসজিদের বাইরে উত্তর গেটের সিঁড়িতে কয়েক হাজার জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজতের উগ্র মৌলবাদী ব্যক্তির বিশাল জমায়েত দেখতে পান। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বে শীর্ষস্থানীয় জামায়াত-শিবির-বিএনপি-হেফাজত নেতারা ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে দেশী-বিদেশী সরকারপ্রধান ও নারীপ্রধানদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত কর্মসূচিকে বানচাল করা এবং ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র করেন। সেই লক্ষ্যে সেখানে রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়া হয়।
এর ফলশ্রুতিতে ১নং আসামির প্রত্যক্ষ নির্দেশনায়, ষড়যন্ত্র ও পরিচালনায় ২নং থেকে ১৭নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিন হাজার হেফাজত, জামাত-শিবির-বিএনপি জঙ্গি কর্মীরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম হাটহাজারীসহ সারা দেশে রাস্তাঘাট, হাটহাজারী থানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্ট্রেশন, ভূমি অফিস, সরকারি পাঠাগার, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান ও যাত্রাবাড়ীসহ দেশের নানাস্থানে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায়।
১নং আসামির নেতৃত্বে ২-১৭নং আসামিসহ অজ্ঞাতনামা আসামিগণ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করে সংবিধান লঙ্ঘন, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস, মসজিদ ভাংচুর করে দেশকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর, মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার মাধ্যমে অবৈধ পথে সরকার উৎখাতের হীন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। সাক্ষীগণ ঘটনা প্রমাণ করিবে এবং তদন্তকালীন সময় বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে।
উল্লেখ্য, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে কেন্দ্র করে ২৬ মার্চ বায়তুল মোকাররমে বিক্ষোভ করে হেফাজতে ইসলাম। সেখানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে তাদের। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে চট্টগ্রামে হাটহাজারী মাদরাসার ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করেন। সেখানে পুলিশের গুলিতে চার ছাত্রের মৃত্যু হয়। এটিকে কেন্দ্র করে শুক্রবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ হয়। সেখানেও সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। হামলা ও হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ২৭ মার্চ বিক্ষোভ ও ২৮ মার্চ হরতাল পালন করে ইসলামি সংগঠনটি। হরতালে দেশব্যাপী হামলা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধ করে হেফাজতের নেতাকর্মীরা।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply