করোনভাইরাস মানুষের শরীরে কীভাবে প্রভাব ফেলে এবং কেন এটি এত মারাত্মক তা বিজ্ঞানীরা ক্রমশ আবিষ্কার করছেন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের একটি সমীক্ষা থেকে জানা গেছে যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ যাদেরকে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে জানেন না যে কোভিড-১৯ তাদের হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, এবং প্রায় ৭০ শতাংশ জানেন না যে যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, ভাইরাস আক্রান্ত হলে ঝুঁকি অনেক বাড়িয়ে তোলে। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা ক্যারল পিয়ারসন তার এই প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে কার্ডিওলজিস্ট অর্থাৎ হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের কাছে একটি জিনিস এখন একদম পরিষ্কার, হার্টের সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিরা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হলে গুরুতর তাদের শারীরিক জটিলতার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। অথচ অনেকে এ সম্পর্কে একেবারেই অবগত নন।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে ড. সমীর কাপাডিয়া বলেন, অনেকে জানেন যে কোভিড-১৯ ফুসফুসকে প্রভাবিত করে। তবে এটি আপনার হৃদযন্ত্রকেও প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষ করে হার্টের রক্ত সারা শরীরে সঞ্চালন করার প্রক্রিয়া, রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়া, এই ধরণের হৃদযন্ত্রজনিত অর্থাৎ কার্ডিওভাসকুলার সমস্যাগুলোর কারণে খুব উচ্চ ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। অনেক সময়, কোনো লক্ষণ না দেখা গেলেও, কোভিড-১৯ একজন সুস্থ সবল মানুষের হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করতে পারে।
সান আন্তোনিওতে অবস্থিত টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে ড. অ্যালেন অ্যান্ডারসন বলেন, আমরা এমন অনেক রোগীদের সংস্পর্শে আসি, যারা সম্ভবত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু তারা এটি শনাক্তও করতে পারেনি এবং এমনও হয় যে কয়েক মাস বা বছর পরে হৃদরোগের লক্ষণগুলো তাদের শরীরে দেখা দেয়। সুতরাং, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে।
ডা. অ্যান্ডারসন এমনও বলছেন যে যাদের করোনভাইরাস হওয়ার আগে হৃদযন্ত্র পুরোপুরি ভালোভাবে কাজ করতো অর্থাৎ কোনোরকম সমস্যা ছিল না, এরকম রোগীদের ক্ষেত্রেও কিন্তু এটি সত্য।
ডা. অ্যালেন অ্যান্ডারসন আরো বলেন, ‘তাদের রক্তের এনজাইম চিহ্নিতকারীগুলির এমন মাত্রায় ছিল যা হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল যদিও তাদের করোনারি ধমনী বন্ধ অর্থাৎ ধমনীগুলোতে কোনোপ্রকার প্রতিবন্ধকতা না দেখা গেলেও তাদের হৃদযন্ত্রের গতিতে বেশ উচ্চ মাত্রায় পরিবর্তন লক্ষ করা গিয়েছিল।’
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক থেকে ড. কাপাডিয়া বলেন, মানসিক চাপও একটি ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, ‘যে সব মানুষ খুব সহজেই ভয় পান, যারা খুব সহজেই রেগে যান, দেখা গেছে যে এ দুটিই রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ার সহায়ক হতে পারে এবং হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে।’ কোভিড-১৯-এর কারণে চিকিৎসারৎসকেরা হৃদযন্ত্রের যে ধরণের ক্ষয়ক্ষতি দেখেছেন, তার মধ্যে কতগুলো এমন আছে, যেগুলো চিকিৎসার সাহায্যে নিরাময় সম্ভব কিন্তু এমন কিছু কিছু সমস্যা দেখা যাচ্ছে যাতে কোনো ওষুধই কাজ করছে না, এবং এর পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু।
সান আন্তোনিওর টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য বিজ্ঞান কেন্দ্রে গবেষকরা অ্যান্টিবায়োটিক এবং ডায়াবেটিসের একটি ওষুধ নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করছেন। তারা গবেষণা করে দেখতে চাইছেন যে এই ওষুধগুলো কভিড-১৯ রোগীদের হার্টের ক্ষতি রোধ করতে পারে কিনা। অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সর্বদাই ব্যাকটিরিয়া সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে। তারা কভিড-১৯ এর মতো ভাইরাস মোকাবিলায় একেবারেই কার্যকরী নয়।
তবে আমাদের শরীরের কোষের ভিতরে মাইটোকন্ড্রিয়া নামক ছোট ছোট শিমের আকারের অংশ রয়েছে। মাইটোকন্ড্রিয়া রাসায়নিক শক্তি উৎপাদন করে এবং হৃদস্পন্দনসহ আমাদের দেহের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ যে ক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করে থাকে, সেগুলোতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে যেহেতু মাইটোকন্ড্রিয়া এক ধরনের ব্যাকটিরিয়া থেকে বিকশিত হয়েছিল, তাই অ্যান্টিবায়োটিক তাদেরকে করোনভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারে এবং এর ফলে মাইটোকন্ড্রিয়া হৃদযন্ত্রকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা লক্ষ্য করেছেন যে, ডায়াবেটিসের যে ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে, সেটি মাইটোকন্ড্রিয়ার শক্তি উৎপাদন চালিয়ে যেতেও সহায়তা করছে।
গবেষকরা আশা করছেন যে করোনভাইরাসের আক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষদের নিয়ে তারা ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করবেন। কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পরও এই সব স্বেচ্ছাসেবীদের হ্রদযন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, সেটা দেখাই হলো এর মুখ্য উদ্দেশ্য।
সূত্র : ভোয়া
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply