1. sm.khakon0@gmail.com : udaytv :
সোমবার, ১১ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন

বরগুনার গোলের সুস্বাদু রস ও গুর যাচ্ছে ভারতে ॥ ভাগ্য ফিরেছে চাষীদের

Reporter Name
  • শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৩১৫ বার পড়া হয়েছে

বীরেন্দ্র কিশোর সরকার, বরগুনা ॥ প্রতিবছর শীত এলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন বরগুনার তালতলী উপজেলার বেহেলা গ্রামের গোল গাছিরা। গোল গাছের রস সংগ্রহ আর গুড় তৈরির কর্মযজ্ঞে এ সময়টাতে বদলে যায় পুরো গ্রামের চিত্র। শীতের চার মাস গোলের রসকে ঘিরে কর্মসংস্থান হয় উপজেলার প্রায় তিন হাজার মানুষের।

বেহেলা গ্রামের এই সু-স্বাদু গোল রসের গুড় এখন দেশের সীমানা পেরিয়ে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এতে ভাগ্য ফিরছে অনেকেরই। তবে গাছিরা চান উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও গুড় বাজারজাতকরণে সরকারি সহযোগিতা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। এসব বাগান থেকে সংগৃহীত রস জ্বাল দিয়ে প্রতি শীতে প্রায় ১০ হাজার টনেরও বেশি গুড় উৎপাদন করা হয়। সবচেয়ে বেশি গাছ আছে বেহেলা গ্রামে। গ্রামটিতে গোল গাছের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার।
এরপরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গাছ রয়েছে পার্শ¦বর্তী গেন্ডামারা গ্রামে। এটিসহ উপজেলার অন্যান্য কয়েকটি গ্রাম মিলিয়ে রয়েছে হাজার পাঁচেক গাছ।

স্থানীয়ভাবে গোলের বাগানকে বলা হয় বাওর। বেহেলা গ্রামে গোলের রস সংগ্রহ থেকে গুড় তৈরিতে কাজ করেন প্রায় পাঁচশ মানুষ।
এই গ্রামে গোলের বাওর রয়েছে প্রায় চার হাজার। প্রতি শীতে এসব গাছ হয়ে ওঠে গাছিদের কর্মসংস্থানের উৎস। একজন গাছি প্রতিদিন তিনশ থেকে চারশটি গাছের রস আহরণ করতে পারেন। বর্তমানে রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছেন অন্তত তিনশ চাষি।

গোলের রস সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকা সবাই গাছের মালিক নন। আবার সব মালিকই নিজে রস সংগ্রহরে কাজটি করেন না। অনেক গাছ মালিকই সংগৃহীত রস সমান অংশে ভাগ করে নেয়ার চুক্তিতে লোক নিয়োগ দেন। চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা মৌসুম জুড়ে রস সংগ্রহ ও গুড় উৎপাদনের কাজে নিয়োজিত থাকেন। রস থেকে যেমন গুড় তৈরি হয় তেমনি রস সংগ্রহের জন্য কেটে ফেলা গাছের ডগাও ব্যবহৃত হয় জ্বালানি হিসেবে। গোল পাতাও বিক্রি হয় আলাদাভাবে।
রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরি:

নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত গোল গাছগুলো রস সংগ্রহের উপযোগী থাকে। এসময় গোলগাছে ফলের ছড়া বের হয়। ওই ছড়া দু তিনটা একত্র করে বেঁধে ধারালো দাও দিয়ে কাটা হয়। আর কাটা অংশ দিয়ে সুমিষ্ট রস বেরুতে থাকে। শীত যত বাড়ে, গাছ থেকে তত বেশি রস ঝরা শুরু হয়। আর একই সঙ্গে বাড়ে চাহিদাও। গাছে প্লাস্টিকের পাত্র বসিয়ে সংগ্রহ করা হয় রস। আগে মাটির হাড়িতে রস সংগ্রহ করা হতো। এখন তা দুস্প্রাপ্য হওয়ায় প্লাস্টিকের পাত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিকেলে ছড়া কাটা হয় এবং খুব ভোরে রস সংগ্রহ করে গাছিরা। ডোঙ্গা বা কড়ইতে ওই রস জ্বাল দিতে দিতে এক সময় সুমিষ্ট গুড় তৈরি হয়।
দাম ও চাষিদের আয়

এ পাঁচ মাসে রস ও গুড় বিক্রি করে লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করেন অনেকে। প্রতি কলস রস বিক্রি
হয় তিনশ থেকে চারশ টাকায়। আর প্রতি কেজি গুড়ের দাম স্থানীয়ভাবে একশ থেকে দেড়শ টাকা।
এক কলস রস দিয়ে তিন কেজি গুড় তৈরি করা হয়। সে হিসেবেই কলস প্রতি রসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
সম্ভাবনা ও সমস্যা
ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়ছে এই গুড়ের। স্থানীয়ভাবে তো বটেই চাষিদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে কিছু গুড় চলে যায় ভারতে। সেখানেও রয়েছে এর জনপ্রিয়তা।

তাই এর উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সহায়তা পেলে আরও ব্যাপক পরিসরে দেশের পাশাপাশি বিদেশেও পাঠানো সম্ভব এই পণ্যটি। এতে চাষিরাও লাভবান হবেন এবং সরকারও পাবে রাজস্ব।
পাশাপাশি, সাময়িক এ আয়ের উৎসে জড়িত হলেও ভালোভাবে রস সংগ্রহ করতে পারেন না অনেকেই। তাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়ারও দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসী। তাহলে এই বেহেলা হয়ে উঠতে পারে গ্রামীণ অর্থনীতির মডেল।
গোল চাষি দীলিপ কুমার হাওলাদার বলেন, শীতের শুরুতে গোলের গাছগুলো কাটার উপযোগী হয়। আমার তিনশটি গাছ আছে। নিজেই কেটে রস সংগ্রহের পর গুড় বানিয়ে গ্রামে বিক্রি করছি।

পরিছন্ন পদ্ধতিতে গুড় তৈরি করায় প্রচুর অর্ডার পান জানিয়ে দীলিপ আরও বলেন, প্রতি কলস রস তিনশ থেকে চারশ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর গুড় বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা করে। আমার ৩০০ গাছ থেকে প্রায় ৮ কলস রস হয়। এ থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার টাকার গুড় উৎপাদন হয়। পুরো শীতে তিন থেকে চার লাখ টাকার গুড় বিক্রি হবে বলেও তিনি জানান।
একই গ্রামের মনিকা রানী বলেন, এই মৌসুমে পাওয়া গোলের রস ও তা থেকে উৎপাদিত গুড়ে ধানের চেয়ে আয় বেশি। আমার ৩৩ শতক জমিতে উৎপাদিত ধানের তুলনায় গোলের গুড়ে লাভ বেশি। এজন্য আমরা এই মৌসুমে ধানের বদলে গোল চাষে আগ্রহী হয়েছি। এতে আমাদের আর্থিক অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, রসের পাশাপাশি গোলপাতাও বিক্রি করা যায়। আর গোলের পরিত্যক্ত ডগাও জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করা হয়।
প্রতিবন্ধী চাষি লাল চন্দ্র বলেন, আমাদের এ গুড়গুলো আত্মীয় স্বজনের মাধ্যমে ভারতে পাঠিয়ে বিক্রি করা হয়। তবে সরকারিভাবে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা গেলে আরও লাভবান হওয়া যেত।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান বলেন, বর্তমান সময় এই গোল গাছের রস ও গুড় একটি সম্ভাবনাময় ফসল।

এখানকার লবণাক্ত মাটিতে ধান বা অন্যান্য ফসল ফলানো খুবই সমস্যাজনক। এখানকার মাটিতে গোলগাছ ভালো হয়। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে গবেষণার মাধ্যমে চাষিদের প্রশিক্ষণ দেয়া হলে এটি কাজে লাগবে। ভালোভাবে গুড় তৈরি করে প্যাকেটজাত করা হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও পাঠানো সম্ভব হবে। এজন্য আমাদের দফতর থেকে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
Uday tv @ ২০২০,সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।
error: Content is protected !!

Designed by: Sylhet Host BD