আপনারা যারা ফাইভ স্টার হোটেল কিংবা ফোর স্টার হোটেলে থেকেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, এসব হোটেলে ব্যক্তিগত তথ্য চরমভাবে গোপন রাখা হয়। এ ধরনের হোটেল কিংবা রিসোর্টের রুলস অব বিজনেসও তাই। নারায়নগঞ্জের রয়েল রিসোর্ট একটি ফোর স্টার হোটেল।
পার্কিং, ব্রেকফাস্ট, ওয়াইফাই ফ্রি সম্বলিত এ হোটেলে পুল, বার, জিমনেসিয়াম, অডিটরিয়ামসহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। নারায়নগঞ্জের জয়নুল আর্ট গ্যালারী থেকে পায়ে হেটে ৯ মিনিটে হোটেলে যাওয়া যায়। একই ডিজাইনের দুটি বিশালাকৃতির বিল্ডিং এ রিসোর্টটি তৈরী করা হয়েছে। বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশে প্রথম টুইন রিসোর্ট বিল্ডিং হচ্ছে রয়েল রিসোর্ট। এই রিসোর্টটি এখন দেশে বিদেশে আলোচিত। মাওলানা মামুনুল হককে স্ত্রীসহ রয়েল রিসোর্ট থেকে কিছু যুবক আটক করে।
পরে পুলিশ তাদেরকে হেফাজত নেতাকর্মীদের হাতে তুলে দেন। এর মধ্যে যা হবার হয়ে গেছে। মিডিয়া একেবারে তুলোধুনো করে দিয়েছে মামুনুল হককে, হেফাজতে ইসলামকে। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। হেফাজতকর্মীরা সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। রাস্তা অবরোধ হয়েছে। কিন্তু এর রেশ থাকবে দীর্ঘদিন।
আমরা বিষয়টা পজিটিভ এবং নেগেটিভ দুইভাবেই দেখতে পারি। যারা সরকার বিরোধী আন্দোলনের সাথে জড়িত তারা দিনে মাঠ গরম করলেও রাতে কিন্তু তাদেরকে অনেকটা আত্বগোপনে থাকতে হয়। শীর্ষ পর্যায়ের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে জেলা, থানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও রাতের বেলায় নিজ বাসাবাড়িতে থাকেন না।
এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। যদি দেশব্যাপী একটা টেনশন থাকে তাহলে নিজ বাড়ি থেকে অন্যত্র থাকাটা আরও বেশি স্বাভাবিক। মামুনুল হক সাধারণ মুসলমানকে একটি নির্দিষ্ট পথে উজ্জিবিত করতে পারদর্শী নেতা। সুনামগঞ্জের ঘটনা, মোদী বিরোধী আন্দোলন, ব্রাহ্মনবাড়িয়া, চট্টগ্রামে মোদী বিরোধী বিক্ষোভে অন্তত ১৬জন খুন, সারা দেশে শতাধিক মামলায় হাজার হাজার হেফাজতকর্মী আসামী, অগ্নিকান্ডের ঘটনার পর মামুনুল হকের দিকে দেশ বিদেশের লাখো চোখ।
দেশী বিদেশী গোয়েন্দারা তার শ্বাসপ্রশ্বাসেরও একটা হিসাব নিচ্ছেন বলেই মনে করা হয়। যার নেতৃত্বে শুধু বাংলাদেশ নয়, বাংলাদেশের চেয়ে ২৭গুন বড় ইন্ডিয়াকে নাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঠিক এ পর্যায়ে থাকলে একজন নেতার প্রতি মিনিটের নোট বই দেশী বিদেশী গোয়েন্দাদের নখদর্পে থাকার কথা। ঠিক তাই হয়েছে। আমার ধারনা মামুনুল হক গোয়েন্দাদের নজরদারী আচ করতে পেরেছেন। দেশ উত্তাল। যে কোনো সময় তার গ্রেফতার হওয়ার আশংকা বিদ্যমান। আত্বীয় স্বজন দলীয় নেতাকর্মীর বাসা থেকেও নিজেকে নিরাপদ মনে করেছেন একটি ফোর স্টার হোটেলে। ঢাকা থেকে কিছু দুরে নারায়নগঞ্জের রয়েল রিসোর্টকেই তিনি বেছে নিয়েছেন থাকার জন্য। সময়ে সময়ে হয়তো বের হয়ে তিনি সভা সমাবেশ এ যোগ দিতেন।
হোটেলে বসেই বিবৃতি দিতেন। প্রশ্ন হচ্ছে- হোটেলের ৫০১ নং কক্ষ বরাদ্ধ নেয়ার সময় মামুনুল হক কোনো তথ্য গোপন করেছেন কিনা। হোটেলে তিনি তার নাম লিখিয়েছেন মামুনুল হক, তার এনআইডি কার্ড এর ফটোকপি জমা দিয়েছেন। সাথে থাকা স্ত্রী আমিনা তাইয়্যেবা তার নাম লিখিয়েছেন সঠিকভাবেই। তার বাবার নাম ওয়ালিউর রহমান, বাড়ি ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানায়। তারা হোটেলের একটি প্যাকেজও নেন। ৫০১ নং কক্ষ ভাড়া বাবদ ৫ হাজার টাকা এবং খাবার খরচ ৩ হাজার টাকা।
বিকাল ৩টায় তারা হোটেলে প্রবেশ করেন। আমিনা তাইয়্যেবা পুলিশকে জানিয়েছেন- তার স্বামী অন্য দশজনের স্বামীর মতো নয়। তারা ইচ্ছা করলেই ঘুরতে পারেননা। একটু সময় কাটানোর জন্য তারা হোটেলে এসেছেন, মানুষতো বিদেশেও যায়। এটা কোনো দোষের বিষয় না। রাসুল সাঃ কোথাও গেলে কোনো একজন স্ত্রীকে সাথে রাখতেন। এমনকি যুদ্ধে গেলেও। সফরে স্ত্রীকে সাথে রাখাও সুন্নত।
আইন কি বলেঃ আমিনা তাইয়্যেবা যদি অন্যের স্ত্রী হিসাবে তালাক প্রাপ্তা হন, ইদ্দতকালীন ৩ মাস অতিবাহিত করেন। তাহলে ২য় বিবাহ করতে আইনে তার কোনো বাধা নেই। অপরদিকে মামুনুল হক যদি ১ম স্ত্রীর অনুমতি নিয়ে ২য় বিবাহ করেন তাহলে তাতেও আইনে তার কোনো বাধা নেই। ১ম স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে মামুনুল হক ২য় বিবাহ করলে মুসলিম পারিবারিক আইনে ১ম স্ত্রীর দায়েরী মামলায় মামুনুল হকের সর্বোচ্চ ১ বছরের সাজা হতে পারে।
যেহেতু বিষয়টা প্রমানিত হয়ে গেছে যে, আমিনা তাইয়্যেবা মামুনুল হকের ২য় স্ত্রী, তাই আমরা এই প্রসঙ্গটি একেবারেই এড়িয়ে যেতে চাই যে, মামুনুল হক বিবাহ বহির্ভূতভাবে আমিনা তাইয়্যেবাকে নিয়ে রিসোর্টে অবস্থান করছিলেন।
২য় বিবাহ প্রসঙ্গঃ ইসলাম ধর্মে একজন পুরুষের সর্বোচ্চ ৪টি বিবাহ করার বিধান রয়েছে। এটি একটি সুন্নত। কিন্তু এই সুন্নতের পাশাপাশি একজন স্ত্রীর প্রতি যে কর্তব্য তা পালন করা সম্ভব কি না। ৪টি বিয়ের কথা বলার সাথে সাথে তা থেকে বিরত থাকার কথাও বিভিন্নভাবে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে পবিত্র কোরআন কি বলে।
পবিত্র কোরআনের সূরা আন নিসার ১২৯ নং আয়াতের (অংশ বিশেষ) বাংলা অর্থ হল- স্ত্রীদের মধ্যে (একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে) পুরোপুরি ইনসাফ করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তোমরা চাইলেও এ ক্ষমতা তোমাদের নেই”। পবিত্র কোরআনের এ আয়াত দ্বারা মূলত ২য় বিবাহ, ৩য় বিবাহ কিংবা ৪র্থ বিবাহকে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
সর্বশেষ কথা হল- মামুনুল হক নিজের স্ত্রীসহ আটকের পরও ইসলামের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল, যে জযবা নিয়ে মাঠে ময়দানে চষে বেড়াতেন তিনি, তাতে বেশ ভাটা পড়ে গেল। দেশী বিদেশী গোয়েন্দাদের কাছে মামুনুল হকের কৌশল বুমেরাং হয়ে গেল।
লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ৪ এপ্রিল ২০২১,
০১৭১১-৭৮২২৩২
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply