হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে আলীপুর বড়বান্দ নামক স্থানে সুটকি নদীতে একটি ব্রিজের অভাবে ১৯ গ্রামের প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
বর্ষা মৌসুমে নৌকাদিয়ে ও শুস্ক মৌসুমে বাঁশের তৈরী ভেলা দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছেন তারা। প্রতি বছরই বাঁশদিয়ে ঐ সকল গ্রামের লোকজনের চাঁদার অর্থায়নে নির্মিত হয় ৩টি বেলা।
এতে খরচ হয় অন্তত পক্ষে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় চলাচল করতে গিয়ে ভেলা ডুবে প্রায় সময়ই সার বীজ সহ লোকজনদের নদীতে ডুবতে হয়। এতে করে অনেককেই মারাত্নক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণসহ অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখে পড়তে হচ্ছে।
ব্রিজ নির্মিত না হওয়ায় কৃষকদের মাঠের ধান কেটে ঘরে তুলতে দ্বিগুণ খরচ গুনতে হয়। জনসংখ্যার দিক থেকে অন্তত ২ লক্ষাধিক লোকের বসবাস এসব গ্রামে। এখানের প্রায় বেশীর ভাগ লোকই কৃষক। নদীর পুর্বপার্শে বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে এ গ্রাম গুলোর কৃষকদের জমি। যুগের পর যুগ থেকে এ নদীর উপর কোন ব্রিজ নির্মিত না হওয়ায় এসব জমিতে আবাদকৃত ধান কেটে বাড়ি পৌঁছাতে কৃষকদের পোহাতে হয় চরম দুর্ভোগ ।
স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, বানিয়াচং উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত এই সুটকি নদীটিতে যুগের পর যুগ ধরে সেতু নির্মাণ হবে সেই আশ্বাস জনপ্রতিনিধিদের। কিন্তু স্বাধীনতার ৫১ বছর পেড়িয়ে গেলেও তাদের চাহিদা কেউই পূরণ করছেন না। ফলে বোনা আমন রোপা আমনসহ ইরিবোরো ধান রোপনে তাদের পরিবহন ছাড়া স্থানীয় লোকদের মাধ্যমে মাথায় করে আনা নেওয়া করার কাজ করতে হচ্ছে।
ফলে সময় বেশী লাগার পাশাপাশি অর্থ বেশী খরচ হচ্ছে। নদীতে ব্রিজ হওয়ার আশায় জাতুকর্ণ পাড়া ঈদগাহ পয়েন্ট থেকে এলাকাবাসী নিজ খরচে একটি কাঁচা সড়ক ও নির্মাণ করেছেন। তাদের এখন একটাই দাবী শুটকি নদীতে ব্রিজ নির্মাণ করা হোক।
উপজেলা সদরের দক্ষিন এলাকার চান্দের মহল্লা, জাতুকর্ণপাড়া, মাইজের মহল্লা, বানেশ্বর বিশ্বাসের পাড়া, চৌধুরীপাড়া, প্রথমরেখ, তাতাড়ীমহল্লা, পাড়াগাও, আদারবাড়ী, দোয়াখানী, মহব্বতখানী, শান্তিপাড়া, রহমতপুর, ছিলাপাঞ্জাসহ ১৯ গ্রামের অন্তত ২ লক্ষাধিক মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ রাস্থায় যাতায়াত করছেন।
সেতুটির পূর্ব পাশে ঐসব গ্রামের লোকজন হাওড়ে ধান রোপনসহ নিত্যদিন ব্যবসা বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে, আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাওয়া উদ্দেশ্যে ঐ বাঁশের বেলা ব্যবহার করে নদীর অপর প্রান্তে যেতে হয়।
এছাড়া পূর্ব দিকে নেয়ামতপুর, ধানকুড়া, রোপাপইল ও আওয়ালমহল গ্রামের লোকজনকে কেনাকাটাসহ নানা কাজে বানিয়াচং সদরসহ হবিগঞ্জ জেলা সদরে যাতায়াত করতে হয় বাঁশের তৈরী এইসক ভেলা দিয়ে।
প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয়রাই প্রতি বছর বাঁশ দিয়ে ভেলা তৈরি করে কোনো রকমে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে নিয়েছেন। বছরের পর বছর মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করলেও আজও সুনজর পড়েনি কর্তৃপক্ষের। ফলে নদীর দুই প্রান্তের মানুষের সেতুবন্ধন অধরাই রয়ে গেছে।
সংশ্লিষ্ট ওই গ্রামগুলোর মানুষের দাবি সুটকি নদীর আলীপুর বড়বান্দ নামক স্থানে একটি ব্রিজ নির্মাণের। ব্রিজটি নির্মিত হলে এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়িত হয়।
এতে করে ঐসব এলাকার লোকেরা সহজে যাতায়াত করতে পারবে। স্থানীয় বাসিন্দা মোসলে উদ্দিন, বাচ্চু মিয়া ও হুমায়ুন কবির বলেন, আমরা গ্রামবাসী বাঁশ দিয়ে ভেলা তৈরী করে কোনো রকম চলাচল করেছি। আমাদের প্রাণের দাবী দ্রুত ব্রিজটি নির্মাণ করা হোক।
ছিলাপাঞ্জা এলাকার সর্দার মোঃ অমরিত মিয়া জানান জানান, ব্রিজটি নির্মাণের জন্য বার বার দাবি জানালেও কাজের কাজ কিছুই হযনি। এতে এলাকবাসী দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের নিকট দ্রুত নদীতে ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়ার জোরদাবী জানান তিনি।
তাতারী মহল্লা এলাকার সর্দার মোঃ ছাবির উল্লাহ জানান, দীর্ঘদিন যাবত ব্রিজের অভাবে এলাকার মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এখানে দ্রুত একটি ব্রিজ নির্মাণ করতে হবিগঞ্জ-২ আসনের এমপি আলহাজ্ব এডভোকেট আব্দুল মজিদ খানের নিকট জোরদাবী জানিয়েছেন।
চান্দের মহল্লা ছান্দের সর্দার হাজী মোঃ আবু জাফর জানান, প্রতি বছর নিজেদের খরচে বাঁশের ভেলা তৈরি করা হয়। তিনি আরো বলেন, আলীপুর বড়বান্দ নামক স্থানে সুটকী নদীতে একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে উপজেলার ১৯ গ্রামের মানুষ উপকৃত হতো।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আবুল কাশেম চৌধুরী বলেন, এখানে নদীর উপর একটি ব্রিজ নির্মাণ খুবই প্রয়োজন। বিষয়টি হবিগঞ্জ-২(বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ) আসনেরর মাননীয় সাংসদ আলহাজ্ব এডভোকেট আব্দুল মজিদ খাঁন মহোদয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply