লন্ডন থেকে মতিয়ার চৌধুরীঃ ২১ বছর বয়সী ব্রিটিশ বাংলাদেশী জঙ্গিবধু শামীমা বেগম আর ব্রিটেনে ফিরতে পারবেনা বলে রায় দিয়েছে ব্রিটেনের সর্বোচ্চ আদালত।
২০১৯ সাল থেকে শামীমার আইনজীবিরা তার নাগরিকত্ব ফিরে পেতে আইনী লড়াই চালিয়ে আসছিলেন। দেশটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে তৎকালীন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভেদ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেন। গেল জুলাই মাসে ব্রিটেনের ইমিগ্রেশন আ্যপিল আদালত শামীমা বেগমের ব্রিটেন ফিরতে কোনা বাঁধা নেই বলে রায় দিলে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আ্যাপিল করলে সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ জন বিচারকের সমন্বেয়ে গঠিত বিশেষ ব্রেঞ্চে দুদিন ব্যাপী শুনানী শেষে আজ শুক্রবার ব্রিটিশ হোম অফিসের পক্ষে এই রায় প্রদান করেন।
রায়ে উল্লেখ করা হয় শামীমা ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তার হুমকী বিবেচনায় হোম অফিস যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা সঠিক। ইসলামিক ষ্টেটে (আইএস) যোগ দিতে ইষ্ট লন্ডনের বেথনালগ্রীন এলাকার বাসিন্দা কিশোরী শামীম্ াবেগম আরো দুই সহপাঠি খাদিজা সুলতানা ১৬ ও আমিরা আব্বাসে ১৫কে সাথে নিয়ে ২০১৫ সালের ১৭ফেব্রুয়ারী ব্রিটেনের গেটউইক এয়ারপোর্ট দিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসে যোগ দেয়। সেখানে ধর্মান্তরিত নেদারল্যান্ডের নাগরিক ইয়াগো রিডজিক নামের এক আইএস জঙ্গিকে বিয়ে করে। ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে সিরিয়ার বন্দি ক্যাম্পে মানবেতর জীবন যাপনে শামীমার এক বছর বয়সী কন্যা ও তিনমাসের শিশু পুত্র মারা যায়।
মানবেতর জীবন থেকে মুক্তির আশায় ব্রিটেনে ফেরার আকুতি জানায় শামীমা বেগম। জঙ্গিগোষ্টী আইএসে যোগ দেওয়ায় শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেন তৎকালীন পাকিস্থানী বংশদ্বোত ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী সাজিদ জাভেদ। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দেয় শামীমা বেগম বাংলাদেশের কেউ নন, সুতরাং বাংলাদেশ কোন জঙ্গিকে গ্রহন করবেনা। শামীমা বেগমকে রাষ্ট্রহীন করা যাবেনা, এবং সে যখন আইএসে যোগ তখন সে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিল।
তার বয়স ছিল মাত্র ১৫ বছর ইত্যাদি যুক্তি দেখিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করলে ইমিগ্রেশন আ্যাপিল আদালত তাকে আদালতে উপস্থিত হয়ে আইনী লড়াই চালিয়ে যাবার পক্ষে রায় দেয়। অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকার এবং ব্রিটেনের সাধারন নাগরিকরা শামীমাকে নিরাপত্তার জন্যে হুমকী মনে করেন। তখন ব্রিটিশ সরকারে পক্ষ থেকে বলা হয় শামীমা সমাজের জন্যে হুমকী সে পূনরায় জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরতে পারে। এর জবাবে শামীমার পরিবারের আইনজীবি তাসনিম আখঞ্জি জানিয়েছিলেন শামীমা ব্রিটেনে ফিরে পূনরায় জঙ্গি কর্মকান্ডে জড়িয়ে পরবে কিনা তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবেনা।
মানবিক কারণে তাঁকে ন্যায় বিচার পাওয়ার সুযোগ দেয়া উচিত । সুপ্রিম কোর্টে শুনানী চলাকালে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের আইনজীবি জেমস এডি যুক্তি তুলে ধরে বলেন ইসলামিক স্টেটে (আইএস) যোগ দিতে লন্ডন থেকে সিরিয়ায় পাড়ি জমানো বাংলাদেশী বংশদ্বোত শামীমা বেগম নিরাপত্তায় ঝঁকি হওয়ার কারনে তাকে আইনী লড়াইয়ের জন্যে ব্রিটেনে ফিরতে দেয়া উচিত হবেনা। তিনি তার যুক্তিতে বলেন ’’ আইএস এর সাথে যাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে তারা ব্রিটিশ নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকী বলেই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা গুলোর অভিমত। তিনি ব্রিটিশ সমাজের জন্যে হুমকী।
জাতীয় নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় শামীমাকে ব্রিটেনে ফিরতে দেয়া মোটেই উচিত হবেনা। অন্যদিকে সিরিয়ায় বন্দি শিবিরে আটক শামীমার স্বামী জঙ্গি ্ইয়াগো রিডজিক ব্রিটিশ ডকুমেন্টারী নির্মাতা এ্যলান ডানকানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে সে আবার শামীমার সাথে বিশ্বের যে কোন স্থানে বসবাস করতে চায়।
ব্রিটেনে জন্ম নেয়া ব্রিটিশ বাংলাদেশী শামীমা বেগমের দেশের বাড়ী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরের আশার কন্দি ইউনিয়নের উত্তর দাওরাই গ্রামে। শামীমা সিরিয়ায় গিয়ে জঙ্গি কর্মকান্ডে যুক্ত হওয়ার পর তার পিতা আহমদ আলী বাংলাদেশে চলে যান। এদিকে ব্রিটিশ বাংলাদেশী একটি উগ্রবাদী গোষ্টী মানবতার অজুহাতে শামীমার আইনী খরছের জন্যে ফান্ড সংগ্রহ করে, এই উগ্রপন্থিরা ইতমধ্যেই শামীমার আইনী খরছের অজুহাতে সংগ্রহ করেছে প্রায় দুইলক্ষ পাউন্ড।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply