মোরশেদ আলম, চাঁদপুর : চাঁদপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত ও লকডাউনের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে। এই সময়ে নমুনা (স্যাম্পল) পরীক্ষা করা লোকের মধ্যে শতকরা ১৩.১২ ভাগের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর শতকরা হার ১.১৪ ভাগ।
অতি সম্প্রতি শনাক্তের হার ও মৃত্যুর সংখ্যা ব্যাপক হারে বাড়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দু’টোই বেড়েছে চাঁদপুরে।
সোমবার চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী, চাঁদপুর জেলায় করোনা টেস্টের জন্য মোট সংগৃহীত নুমনার পরিমাণ ২৩৮৫টি। এর মধ্যে রিপোর্ট এসেছে ২০০৪টি। সংগৃহীত নমুনার মধ্যে রিপোর্ট প্রাপ্তির শতকরা হার ৮৪.০২ ভাগ।
প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী ২৬৩ জন করোনায় আক্রান্ত। এ হিসেবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে আক্রান্তের হার শতকরা ১৩.১২ ভাগ। তবে অন্য জেলায় নমুনা টেস্টে আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার পর চাঁদপুরে অবস্থান করা লোকসহ জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭৭জন। সে হিসেবে আক্রান্তের হার শতকরা ১৩.৮৮ ভাগ। এর মধ্যে ২৩জন মারা গেছেন। মৃত সবাই চাঁদপুরেই মারা গেছেন।
দেশে ৮ মার্চ প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হলেও চাঁদপুরে সন্দেহভাজন লোকদের নুমনা সংগ্রহ শুরু হয় ২৭ মার্চ। ওইদিন ঢাকার আইইডিসিআর থেকে বিশেষ টিম এসে চাঁদপুরের একজনের নমুনা সংগ্রহ করে। ২ এপ্রিল চাঁদপুর সিভিল সার্জন অফিসের তত্ত্বাবধানে জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়। প্রথম দিনে চাঁদপুর সদর, হাইমচর, মতলব দক্ষিণ, ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জ থেকে ২জন করে মোট ১০ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। চাঁদপুরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৯ এপ্রিল। তার নাম মোঃ সুজন (৩২)। নারায়ণগঞ্জ ফেরত এই যুবক অসুস্থ অবস্থায় মতলব উত্তরে তার শ্বশুর বাড়িতে আসার পর ৬ এপ্রিল নমুুনা দিয়েছিলেন। চিকিৎসার পর তিনি এখন সুস্থ। প্রথম শনাক্তকৃত করোনা রোগী সুজনের নমুনা টেস্টের পজেটিভ রিপোর্ট আসার দিনেই (৯ এপ্রিল) চাঁদপুর জেলা লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক। ওইদিন সন্ধ্যায় এই লকডাউন কার্যকর শুরু হয়। সরকারের কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে অনেকটা শিথিল পর্যায়ে লকডাউন এখনো বহাল রয়েছে জেলায় বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খান।
চাঁদপুরে করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১১ এপ্রিল চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের কামরাঙ্গা এলাকায়। তিনিও নারায়ণগঞ্জ ফেরত। শ্বশুর বাড়িতে করোনার উপসর্গ নিয়ে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তার নমুনা সংগ্রহ করে। ১৫ এপ্রিল তার নমুনা টেস্টের রিপোর্ট আসে করোনা পজেটিভ। এরপর তার শ্বশুর ও এক শ্যালিকা করোনায় আক্রান্ত হন। শ্যালিকা সুস্থ হয়েছেন। আর শ্বশুর করোনা থেকে সুস্থ হয়ে পরবর্তীতে মারা যান।
চাঁদপুরে করোনার আগমন ও সংক্রমণের বাহক হিসেবে স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফেরত লোকদের চিহ্নিত করেছে। প্রথম পর্যায়ে বিদেশ ফেরত লোকদের সন্দেহের শীর্ষে রাখা হলেও এখন পর্যন্ত জেলায় একজন বিদেশ ফেরত লোকেরও করোনা শনাক্ত হয়নি।
চিকিৎসকদের মতে, সারা জেলায় এখন করোনার কমিউনিটি ট্রান্সমিশন চলছে। গত এক সপ্তাহ ধরে চাঁদপুরে করোনায় আক্রান্ত, আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু এবং করোনার উপসর্গে মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক হারে বেড়ে চলেছে।
Designed by: Sylhet Host BD
Leave a Reply