1. sm.khakon0@gmail.com : udaytv :
বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:০৪ অপরাহ্ন

করোনায় কমেছে ৭০ ভাগ চাকরিজীবীর আয়

উদয় টিভি ডেস্ক রিপোর্ট
  • রবিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
  • ৬৮০ বার পড়া হয়েছে

করোনার কারণে গত বছর ৭০ শতাংশ চাকরিজীবীর আয় কমে গেছে। আগামীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও ৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আর কখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরবে না। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের এক যৌথ জরিপে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার ‘মহামারী এবং বাংলাদেশের যুব জনগোষ্ঠী : চারটি নির্বাচিত জেলার জরিপের ফলাফল’ শিরোনামের একটি ওয়েবিনার জরিপে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়।

জরিপে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের নভেম্বরে জরিপকৃত চারটি জেলায় মজুরি বা বেতনভুক কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের মধ্যে ৭০ শতাংশের আয় কমেছে, ২৮ শতাংশের আয় অপরিবর্তিত রয়েছে এবং ২ শতাংশের আয় বেড়েছে। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিতদের মধ্যে এই সময়কালে লাভ কমেছে ৮২ শতাংশের, অপরিবর্তিত রয়েছে ১৫ শতাংশের এবং বেড়েছে ৩ শতাংশের। স্বকর্মসংস্থানে নিয়োজিত এই চারটি জেলায় করোনার সময়ে ব্যবসা বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হয়েছে ৩১ শতাংশের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশার সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির। জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এবং সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট মাহতাব উদ্দিন।

জরিপের ফলাফল উপস্থাপনের সময় মাহতাব উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে সানেম ও অ্যাকশনএইড চারটি জেলাÑ বরগুনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামের ১৫৪১টি খানার ওপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে একটি জরিপ পরিচালনা করে। এই জরিপে তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী ইত্যাদির ওপর করোনা মহামারীর প্রভাব নিরূপণের চেষ্টা করা হয়। একই সাথে এই জরিপে তরুণদের মধ্যে নাগরিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রবণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সচেতনতার মাত্রাও বুঝতে চাওয়া হয়। জরিপে জেন্ডারবিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু যেমন নারীর প্রতি সহিংসতা, নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তিতে নারীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছে। জরিপে ইনুমেরটর হিসেবে কাজ করেছেন চারটি জেলার চারটি যুব সংগঠনের সদস্যরা। জরিপে ১৫-৩৫ বছর বয়সীদের যুব জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

করোনার সময়ে অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাননি এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা কুড়িগ্রামে ৬২ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ৫৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৯ শতাংশ এবং বরগুনায় ৪৬ শতাংশ। গড়ে এই চারটি জেলার ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পায়নি। এই চারটি জেলার ৫০ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পায়নি, অপর দিকে ৫৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পায়নি। করোনাকালে এই চারটি জেলার ৫২ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থীর কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না, অপর দিকে ৬৫ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীর কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না। গড়ে এই চারটি জেলার ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না।

জরিপে বলা হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হলে নিয়মিত পড়াশুনায় ফিরবে না অথবা এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা আছে এমন মত দিয়েছে এই চারটি জেলার ৩.৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী। ছেলে শিক্ষার্থীর মধ্যে এই হার ৩.৫২ শতাংশ এবং মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪.০৩ শতাংশ। গ্রামে এই হার ৪.৪১ শতাংশ আর শহরে ১.৬৫ শতাংশ।

চারটি জেলার লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার চিত্র বোঝার ক্ষেত্রে জরিপকৃত খানাগুলোর ১৫-৩৫ বছর বয়সী ১২৭০ জন নারীকে প্রশ্ন করা হয়। জরিপের ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা গ্রামের এবং ১৫ শতাংশ শহরের। জরিপে অংশগ্রহণ করা ১৯ শতাংশ অবিবাহিত এবং ৮১ শতাংশ বিবাহিত। বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ জানিয়েছে, তারা স্বামীদের দ্বারা কোনো না কোনো ধরনের শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে। কুড়িগ্রামে এই হার ৪১ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ২২ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৮ শতাংশ এবং বরগুনায় ৫৫ শতাংশ। স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মাধ্যমে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছে বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৩০ শতাংশ, অবিবাহিত নারীদের মধ্যে ২৮ শতাংশ। কোনো ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার পরে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে ৫ শতাংশ নারী। আইনি পদক্ষেপ না নেয়ার পেছনে ৬৫ শতাংশ জানিয়েছে তারা প্রয়োজন মনে করেনি, লজ্জা বা ভয়কে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ৩২ শতাংশ, পরিবারের সদস্যদের ভয়কে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ১৯ শতাংশ, আর্থিক সক্ষমতার অভাবকে চিহ্নিত করেছে ১৩ শতাংশ, আইনের প্রতি আস্থার অভাবকে চিহ্নিত করেছে ১২ শতাংশ নারী। প্রসঙ্গত জরিপের সময় উত্তরদাতারা এই বিষয়ে একাধিক কারণ জানানোর সুযোগ পেয়েছে।

গণপরিবহনে যাতায়াত করতে নিরাপদ বোধ করে কিনা- প্রশ্নের উত্তরে ৪০ শতাংশ নারী জানিয়েছে তারা নিরাপদ বোধ করে। জরিপে ৬৫ শতাংশ নারী জানিয়েছে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট রয়েছে। জরিপকৃত ১৪ শতাংশ নারী জানিয়েছে তারা ফেসবুক বা ইউটিউব ব্যবহার করতে পারে। পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা আছে ৬৫ শতাংশ নারীর, বিবাহিতদের মধ্যে এই হার ৬৭ শতাংশ এবং অবিবাহিতদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ।

জরিপে দেখা গিয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুবদের অংশগ্রহণের হার ৭.৬২ শতাংশ। কুড়িগ্রামে এ হার ৪.৬৭ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ৬.৫৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৩.৪৫ শতাংশ এবং বরগুনায় ৬.৩১ শতাংশ। অরাজনৈতিক সংগঠনে যুবদের অংশগ্রহণের হার ৬.৪ শতাংশ এবং রাজনৈতিক সংগঠনে ৩.৬ শতাংশ।

ড. সায়মা হক বিদিশা আলোচনার সূত্রপাত করে বলেন, বাংলাদেশ জনমিতির যে সুবিধাজনক অবস্থান উপভোগ করছে তা কাজে লাগানোর জন্য তারুণ্যের সঠিক ব্যবহার করা জরুরি, যার ব্যত্যয় আমরা অনুধাবন করি সার্বিক বেকারত্বের হার অপেক্ষা তরুণ জনগোষ্ঠীর অধিকতর বেকারত্বের হার এবং শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মক্ষেত্রের বাইরে থাকা তরুণ সমাজের উপস্থিতির হার এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ঝরে পড়া তরুণদের উপস্থিতি থেকে। এর পাশাপাশি তরুণ নারীরা কর্মক্ষেত্র, উচ্চশিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে লিঙ্গবৈষম্যের পাশাপাশি সহিংসতার শিকার হচ্ছে, যা অধিকতর আলোচনার সুযোগ রয়েছে।

ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব দিলরুবা শারমীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ওইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সানজিদা আখতার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ, সুইসকনট্যাক্টের টিম লিডার নাদিয়া আফরিন শামস ও ব্র্যাকের দিবা ফারাহ হক। ওয়েবিনারে বিশেষ বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। ওয়েবিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ১১০ জন ব্যক্তি যোগ দেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
Uday tv @ ২০২০,সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।
error: Content is protected !!

Designed by: Sylhet Host BD