1. sm.khakon0@gmail.com : udaytv :
রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন

আসুন, অন্ধ শাহেনা ও শাবানার পাশে দাড়াই

এম এ মজিদ
  • বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২১
  • ৩৪৩ বার পড়া হয়েছে

শাহেনা ও শাবানা, আপন দুই বোন। বাড়ি হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ছোট বহুলা গ্রামে। তারা দুজনই পুরোপুরি অন্ধ। একজন জন্ম থেকেই অন্ধ, অন্যজন জন্মের কিছুদিন পর থেকে অন্ধ। কোনো চিকিৎসাই কাজে আসেনি। সঠিক ও উন্নত চিকিৎসার অর্থও ছিল না।

বাবা নেই। মা বৃদ্ধা, অসুস্থ । তাদের পার্থিব সম্পদ বলতেও কিছূ নেই। জীর্ণশীর্ণ একটি ঘরে তাদের বসবাস। বসতঘরের অনেক দুরে বাথরুম। বাথরুমে আসা যাওয়া তাদের পক্ষে অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাতের বেলায়ও তো কথাই নেই। নিজেরা রান্না করতে পারে না, পাড়া প্রতিবেশীরা সহযোগিতা করে, লাঠি ভর দিয়ে চলে ওরা, তাও দিনে কতবার যে পড়ে গিয়ে, ঠেস লেগে আঘাত পায় তার কোনো হিসাব নেই। আল্লাহর দুনিয়ায় শক্তিহীন, দৃষ্টিহীন এক অসহায় সৃষ্টি শাহেনা ও শাবানা। আমার সীমিত সাধ্যের মধ্যে বেশ কিছুদিন যাবত আমি তাদের পাশে আছি।

গত বছর আমেরিকা প্রবাসী ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী নয়ন সম্ভবত ৫ হাজার টাকা ওদেরকে দিয়েছিল, এ বছর আমি বলিনি, নিজ থেকেই ৪২৬৮ টাকা পাঠিয়েছে। বিষয়টা নিয়ে আলাপ করছিলাম, লন্ডন প্রবাসী চুনারুঘাটের মইনুদ্দিন চৌধুরী কাউছার এর সাথে। একদিনের ব্যবধানে কাউছার অন্ধ দুই বোনকে পাঠিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। ইতিমধ্যে দুজনের টাকাসহ আমি কিছু টাকা যোগ করে শাহেনা ও শাবানাকে দিয়েছি। এগুলোতে হয়তো কিছুদিন তাদের চলবে। কিন্তু তা ক্ষনস্থায়ী। আল্লাহর জমিনে তাদের বিচরণ যদি আরও দীর্ঘ হয়, তাহলে স্থায়ী একটা কিছুর প্রয়োজন। বসতঘর এবং বাথরুম।

অন্ধ দুবোনের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। তারা জানিয়েছে- আমরা অন্ধ, সাহায্যের জন্য কারো কাছে যেতে পারি না, কেউ যদি সাহায্য দেয়, তাহলে আমরা খাই, কিন্তু একই প্রতিবেশী কতবার দেবে? কেউ তো আর আমাদের অন্ধদের খুজে খুজে আমাদের বাড়িতে এসে সাহায্যও দিয়ে যাবে না। যদি তাদেরকে এক দুটি জমি বন্ধক রেখে দেয়া যেতো, অনেক প্রতিবেশী আছে যারা অন্ধ দু বোনের জমিগুলো বিনা পয়সায় আবাদ করে দেবে। জমি থেকে প্রাপ্ত ধানে তাদের খোরাক চলতো এবং অতিরিক্ত ধান বিক্রি করে তাদের অন্য খরচ মেটানো যেত। এমনটি করা হলে দিনের পর দিন এভাবে তাদেরকে অনিশ্চিতভাবে রাত কাটাতে হয়তো হবে না। তাদের কোনো উত্তরসূরী নেই, স্বামী নেই, সন্তান নেই। তাদের কেউ মারা গেলে বন্ধক রাখা জমি গুলো ছাড়িয়ে এনে দাফন কাফন করা যাবে। অবশিষ্ট অর্থ মসজিদ মাদ্রাসায় দান করে দেয়া যাবে।

এমন অনেক হৃদয়বান মানুষ আছেন, যারা সঠিক জায়গায় দান করার সুযোগ পান না। আমি বলব, আপনার চোখের শুকরিয়া আদায়ের জন্য অন্ধ মানুষগুলোকে দান করার চেয়ে বড় কোনো শুকরিয়া হতে পারে না। হবিগঞ্জ শহরের কোর্ট স্টেশন থেকে তিন কিলোমিটার দুরে ছোট বহুলা গ্রামে শাহেনা ও শাবার বাড়িতে যেতে সময় লাগে ৭/৮ মিনিট। নিজেরা গিয়ে দেখে আসুন, তাদের পাশে দাড়ান। চলুন আমরা অন্ধ দুই বোন শাহেনা ও শাবানার পাশে থাকি।

পবিত্র কোরআনের আলোকে কিছু কথাঃ সূরা আত তাকাসুর এর শেষ আয়াত দিয়েই আমি শুরু করতে চাই। শেষ আয়াত অর্থাৎ ৮নং আয়াতে বলা হয়েছে- “অবশ্যই তোমাদেরকে প্রত্যেকটি নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে”। কোরআনের প্রত্যেকটি সূরা স্বতন্ত্র এবং পরিপূর্ণ। যদিও সূরা আন নাস ও সূরা আল ফালাক এবং সূরা আদ দোহা ও সূর আল ইনশিরাহ এর মতো কয়েকটি সূরা আছে যে গুলোর একটির সাথে আরেকটির অর্থগত মিল রয়েছে। সূরা আত তাকাসুর যদি কেউ একবার পড়ে, আমার বিশ্বাস সে বারবার পড়বে। জীবন ঘনিষ্ট এতোসব বিষয় সূরাটিতে আলোকপাত করা হয়েছে, যা চিন্তাশীলদের জন্য বুঝার এক বড় উৎস। প্রথমেই বলা হয়েছে- প্রাচুর্য্য, ধন সম্পদের লালসা তোমাদেরকে গাফেল করে রেখেছে।

এমনভাবে গাফেল করে রেখেছে একটা সময় ধন সম্পদের চিন্তা করতে করতে তোমরা কবরে পর্যন্ত পৌছে যাও। কোরআনকে বলা হয়েছে- পৃথিবীর প্রত্যেক এলাকার জন্য, প্রত্যেক জাতী ধর্ম বর্ণ সকলের জন্য বর্তমান। অর্থাৎ আপনি এই মুহুর্তে কোনো সমস্যায় পড়েছেন, এই মুহুর্তে কোনো একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা করছেন, তার পথ বাতলে দেবে আল কোরআন। একই সূরায় বলা হয়েছে তোমাদেরকে জাহান্নাম দেখানো হবে, এবং দুই চোখ ভরে জাহান্নাম দেখানো হবে। এই সূরার ব্যাখ্যায় রন্দ্রে রন্দ্রে আল্লাহর নেয়ামতকে স্বীকার করা, শুকরিয়া আদায় করা, নেয়ামতের হক আদায় করার কথা বলা হয়েছে। আমাদেরকে দেয়া প্রত্যেকটি নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে। আমাদেরকে যদি শুধু দুটি চোখের নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, আমরা যে বছরের পর বছর চোখগুলো ব্যবহার করছি, এর মধ্যে এক মিনিটের সঠিক ব্যবহারেরও জবাব দিতে পারব না। শুধু চিন্তা করুন, চলতি পথে চোখে কোনো বালু কনা পড়লে আমাদের কী অবস্থা হয়। শুধু চোখ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে একাধিক জায়গায় সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে।

সূরা আনআম এর ৪৬ নং আয়াত পড়ে দেখুন, সেখানে বলা হয়েছে- যদি আল্লাহ তোমাদের থেকে তোমাদের দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবনশক্তি ছিনিয়ে নেন, তোমাদের হৃদয়ে মোহর মেরে দেন, তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কোন্ ইলাহ আছে যে এ শক্তিগুলো তোমাদেরকে ফিরিয়ে দিতে পারে? সূরা আন আমের ৫০নং আয়াতে আল্লাহ স্পষ্টভাবেই বলেছেন- “ তারপর তাদেরকে জিজ্ঞাসা করো- চোখ ওয়ালা (দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষ) ও চোখ ছাড়া (অন্ধ) মানুষগুলো কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা ভাবনা কর না?” চোখ হচ্ছে এমন এক শক্তি, যা সাড়ে তিন হাত বডিকে নিয়ন্ত্রণ করে। চোখ বন্ধ করে দিলে আপনার শক্তি কোনো কাজে আসবে না।

অনেক সময় আইন শৃংখলা বাহিনী যদি কোনো অপরাধীকে ধরে, দেখবেন তাৎক্ষনিক শক্ত করে কাপড় দিয়ে তার চোখ বেধে ফেলে। চোখ বেধে ফেলায় ওই ব্যক্তির কিন্তু আর কোনো শক্তিই থাকে না। ফাসির আসামীর চোখ বেধে ফেলার কারণ কিন্তু শুধু ভয় না, শক্তিকে ডেমেজ করাও।

অর্থাৎ চোখহীন মানুষগুলো শক্তিহীনও। আসুন আমরা চোখহীন শক্তিহীন শাহেনা ও শাবানার জন্য এমন একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করি, যা আমাদের পরবর্তী জীবনের জন্য পাথেয় হতে পারে। শাহেনা ও শাবানাকে যারা সাহায্য করতে চান, সরাসরি তাদের সাথে দেখা করে সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি। আমার সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন, এক্ষেত্রে আপনার নাম ঠিকানাসহ সহযোগিতা করতে পারবেন, নাম ঠিকানা দেয়ার পর তা প্রকাশ করতে আগ্রহী না হলে তাও বলতে পারেন।

লেখকঃ আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
হবিগঞ্জ ১৫ এপ্রিল ২০২১
মোবাইলঃ ০১৭১১-৭৮২২৩২

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরো সংবাদ পড়ুন
Uday tv @ ২০২০,সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত।
error: Content is protected !!

Designed by: Sylhet Host BD